আশ্বিনের শেষদিক প্রায়। তবে মাঝেমধ্যে শরতের মেঘের সাথে দেখা মিলছে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির, অবাক করে দিয়ে বৃষ্টির গতিও বাড়ছে। এর মাঝেই ঝর্ণা দেখার সুযোগ না নিলে, এবছর আর শেষবারের মতো সখ্যতা করা সম্ভব হবে না পাহাড়ী কন্যার সাথে। কয়টা দিন একঘেয়েমি কাটানো, আর ক্লাব থেকেও ভ্রমণের আয়োজন করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছিলাম। বহু আলোচনার পর ঠিক হলো এবারে ‘NSTU Adventure Club’ এর যাত্রা হবে বিলাইছড়ির ঝর্ণাগুলোতে। দিনক্ষণ ঠিক করার পাশাপাশি ভ্রমণ যাত্রায় সদস্য সংগ্রহের কাজও চললো সমান তালে। সর্বসাকুল্যে ঠিক হল আমরা ১৫ জন যাবো এবারের ক্লাব ইভেন্টে। ভ্রমণসঙ্গী হলো মেজবাহ, প্রান্ত সেন, তাসমিয়াহ, মুন্না, রূপক, সুফিয়ান, নিশান, রাহাত, মামুন, সামি, সৌরভ, জেনি, অদ্রিজা, প্রান্ত দত্ত ও আমি সুপ্তি।

অক্টোবর ১০, ২০১৯। আবহাওয়া মেঘলা, টুপটাপ বৃষ্টিরও দেখা মিললো। কথামতো, বেলা ১ টায় রুপক সোনাপুর থেকে ফেনী চলাচলের বাস ‘সুগন্ধায়’ ১২ টা সিট বরাদ্দ করে নিয়ে আসবে, আর মাইজদীর বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে একে একে বাসে উঠে পড়বে সবাই। বাকি ১ জন যোগ দিবে ফেনীতে, আর বাকি ২ জন চট্টগ্রাম থেকে। সুগন্ধা সবসময়ই লোকে লোকারণ্য থাকে, এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটলো না। আমাদের বসার জায়গা মিললো বাসের শেষ সিট গুলোতে । এদিকে বাসচালক মামা কোথাও থামতেই চাইছিল না। কাঙ্খিত সদস্যদের সাথে যোগাযোগ করে বাসে তুলতে যথেষ্ট বেগ পেতে হচ্ছিলো আমাদের। একজন তো বাস ধরতেই পারলো না। পরে অবশ্য সিএনজিতে উঠে আমাদের আগেই চৌরাস্তায় পৌঁছে যোগ হলো আমাদের সাথে। সিএনজির দ্রুততা আর চৌমুহনী চৌরাস্তার জ্যাম আমাদের সকলকে এক করতে সাহায্য করে। যদিও এমন ঘটনা ঘটার কারণেই রোমাঞ্চের স্বাদ পেয়ে গেলো সবাই; প্রফুল্ল চিত্তে চললো হাসাহাসি, গল্প। আর অনুভব করলাম নতুন কোথাও যাওয়ার উত্তেজনা। একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হওয়া সত্ত্বেও আমরা বেশ ক’ জন অপরিচিত ছিলাম একে অন্যের, এমন গল্পে-হাসিতে নিজেদের দূরত্ব কমে গেলো অনেকখানি। চৌরাস্তায় এসে বৃষ্টির জোর খানিকটা বেড়ে গেল। ঘন্টা দেড়েকের মাঝেই আমরা পৌঁছে গেলাম ফেনীর মহিপালে; সুগন্ধায় গুনতে হলো জনপ্রতি ভাড়া ৫০ টাকা।
মহিপাল থেকে দেশের প্রায় সকল প্রান্তেই সরাসরি বাস যোগাযোগে ভ্রমণ করা সম্ভব। মহিপালে এসে বৃষ্টি মাথায় নিয়ে দৌড়ে বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে উঠলাম। মুন্না ওখানেই আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিলো। এ বাস-ও বাস করে অবশেষে ঠিক হলো ‘তিশা প্লাসেই’ রওনা হবো চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে। ১৩ টা সিটের বন্দোবস্ত করা গেলো সহজেই; এ দিকটায় চট্টগ্রামের বাস পাওয়া বেশ সহজলভ্য, আর সময়সাপেক্ষও না। বাসে যেতে যেতে অপরিচিতদের সাথে পরিচয় পর্বটা আরও গাঢ় হলো। জনপ্রতি মাত্র ১০০ টাকা ভাড়ায় আমাদের নামিয়ে দিলো ভাটিয়ারী। আমরা যখন ভাটিয়ারী নামলাম তখন বিকেলের শেষভাগ প্রায়; আকাশের হলুদ আর মিশকালো রঙ একটা ক্লান্তি এনে দিচ্ছিলো আমাদের যাত্রায়। কিন্তু তখনো আমাদের যাত্রা অনেকটাই বাকি।

এবার আমাদের লক্ষ্য ভাটিয়ারী থেকে বড় দীঘির পাড়। ভাটিয়ারী থেকে বড় দীঘির পাড় যেতে আমরা জীপ খু্ঁজতে লাগলাম। এই জীপগুলো স্থানীয় মানুষদের ভাটিয়ারীর পথটুকু নিয়মিত আসা যাওয়ার জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে, দেখতে খানিকটা শহুরে লেগুনার মতো। তবে তুলনামূলক বেশ বড় এবং উপরের অংশটা খোলা, অর্থাৎ কোনো ছাদ নেই। যেহেতু ভাটিয়ারীর পথ ধরে এগোচ্ছি, এর দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে খানিকটা ধারণা দেয়া যাক। মূলত চট্টগ্রাম শহর থেকে মাত্র ১৫ কি.মি. দূরত্বে সীতাকুণ্ড উপজেলার দক্ষিণাংশে ভাটিয়ারী ইউনিয়ন অবস্থিত। সবুজ পাহাড়ে ঘেরা, সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত গলফ ক্লাব, সানসেট পয়েন্ট; সমস্তটা মিলিয়ে চোখে আরাম এনে দেয়ার মতো প্রাকৃতিক পরিবেশ। ভাটিয়ারীর দারুণ ব্যাপার হলো একদিনের ভ্রমণ পরিকল্পনার জন্য এটি আদর্শ একটি জায়গা, পরিবার বা বন্ধুদের নিয়ে খুব মন খারাপের দিনে এ জায়গাটায় এসে মনে প্রশান্তি মেলে ।
আমরা যখন ভাটিয়ারীর উঁচু-নিচু পরিচ্ছন্ন রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলাম, টের পেলাম সবাই কেমন নীরব হয়ে উপভোগ করছে বিকেলের ম্লান আলো। সূর্য ডুবছে; আরেকটা মৃতপ্রায় দিনের ছাপ রেখে যাচ্ছে কি অকৃত্রিম আলো-আঁধারের খেলায়। এর মাঝে কোথা থেকে নাছোড়বান্দা বৃষ্টি এসে হানা দিলে ফোঁটায় ফোঁটায়। পুরো জীপগাড়ির খোলা অংশটা ঢাকতে হলো ত্রিপল দিয়ে, দৃষ্টির অগোচরে চলে গেল চারিপাশের মায়াবী পরিবেশ। প্রত্যেকের ২০ বা ৩০ টাকা ভাড়া পড়লো জীপগাড়িতে, নামিয়ে দিলো বড় দীঘির পাড়ের একটা ফিলিং স্টেশনে। পরিকল্পনামতে প্রান্ত আর সুফিয়ান চট্টগ্রামের অক্সিজেন মোড় থেকে রাঙামাটি অভিমুখী বাসে রওনা হয়ে গিয়েছে বেশ কিছুক্ষণ আগেই। এ পথ দিয়েই সেই বাস আসবে, আর আমাদের তুলে নিয়ে চলবে রাঙামাটির উদ্দেশ্যে। তাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে লাগলাম আমরা, কেউ কেউ নিজ খুশিমতো টুকিটাকি খাবার দাবার কিনে ফেললো; কেউবা প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে ঢুকে গেলো ফিলিং স্টেশনে। সবাই এক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকাটা দুরূহ হয়ে উঠছিলো, কারণ মন্থরগতিতে বৃষ্টি ঝরেই যাচ্ছে তখনো। নিয়মিত যোগাযোগের মাধ্যমে জানতে থাকলাম প্রান্তরা আর আমাদের থেকে কতোখানি দূরত্বে আছে, কারণ রাঙামাটিমুখী বাসটা কোনোভাবেই মিস করা যাবেনা।

সম্ভবত, ঐ দিনের চট্টগ্রাম থেকে রাঙামাটি যাওয়ার শেষ বাস ছিল এটি। অক্সিজেন থেকে বড় দীঘির পাড়ের দূরত্ব খুব বেশি নয়, বাসযোগে মাত্র ২০-২৫ মিনিট। কিন্তু এতোখানি ভ্রমণ, বারংবার যানবাহন পরিবর্তনের ক্লান্তি থেকে সবাই মুক্তি চাইছিলো যেন। সবাই বেশ অধৈর্য্য হয়ে বৃষ্টির মাঝেই রাস্তার এ মাথা থেকে ও মাথা হাঁটাহাঁটি করছিলো। এমন সময়েই প্রান্তের ফোন জানালো, তারা আর বেশি দূরে নয়। প্রায় সাতটা বাজতে চললো, আমরা সবাই একত্র হতে গিয়ে টের পেলাম একজন নেই। বেশ কয়বার ফোন দিয়েও তাকে পাওয়া গেলো না; এদিকে বাস এসে হাজির, বারংবার হর্ণ দিচ্ছে। উত্তেজনা আর চিন্তায় ক্লান্তি নেমে গেলো অনেকখানি, শেষ পর্যন্ত খোঁজাখুঁজি করে পাওয়া মাত্রই তাকে নিয়ে উঠে পড়লাম বাসে। আমরা মূলত হাটহাজারী লিংক রোড দিয়েই রাঙামাটির দিকে এগোচ্ছি। ‘পাহাড়িকা’ নামের এ বাসটা চট্টগ্রাম-রাঙামাটি-চট্টগ্রামের পথে বেশ সুপরিচিত বাস, এ বাসেও সব শেষ সিটগুলোই আমাদের ভাগ্যে জুটলো। তবে তা নিয়ে কাউকে চিন্তিত মনে হলো না, বরং ক্ষুধায় কাতর হয়ে পড়লাম অনেকেই। অপেক্ষা আর নানারকম উত্তেজনায় বেমালুম ভুলে গিয়েছি খাবারের কথা। বেশ অনুরোধ করে, ড্রাইভার মামাকে দাঁড় করিয়ে হালকা নাস্তার জন্য কিছু বিস্কুট আর কলা নিয়ে নিলাম।
এবারের বাস ভ্রমণটা যেন সহজে শেষ হচ্ছিলো না। অনেকক্ষণ হৈ-হুল্লোড় করে কাটলো ঠিকই, কিন্তু একটা সময় মনে হলো আজ বুঝি আর সাধের রাঙামাটি পৌঁছুবো না। পাহাড়িকার জনপ্রতি ৯৫ টাকার ভাড়ায়, দেড়-দুই ঘন্টার রাস্তাকে মনে হচ্ছিলো যেন যুগ যুগান্তর ধরে চলমান রাস্তা। আইনস্টাইনের সময়ের আপেক্ষিকতা সূত্রের সত্যতা টের পেলাম সবাই। ক্ষুধা আর ক্লান্তিতে যা-তা অবস্থা সবার। এর মাঝেই আমাদের বন্ধু সজলের সাথে যোগাযোগ হচ্ছিলো; তার বাসা রাঙ্গুনিয়া, দ্বিধান্বিত হয়ে জিজ্ঞেস করছিলো আমাদের সাথে যোগ দিতে পারবে কিনা? আমরা তো সাদরে আমন্ত্রণ জানিয়ে ফেললাম! তবে বিপত্তি ঘটলো অন্য জায়গায়, ঐ সময়টাতে রাঙ্গুনিয়া থেকে আদৌ রাঙামাটির আসার কোনো বাস পাওয়া সম্ভব হবে কিনা, তা জানা নেই কারও। তবুও, সজল আর তার এক বন্ধু মিলে রাত আটটায় রওনা হলো আমাদের ভ্রমণসঙ্গী হওয়ার জন্য।

রাঙামাটি যখন নামলাম, তখন রাত প্রায় নয়টা। সকলেই দীর্ঘ ভ্রমণ, আর ভীষণ ক্ষুধায় ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত। আগে থেকেই ‘হোটেল প্রিন্সে’ বুক করা ছিলো তিনটা রুম, দু’ বেডের রুমপ্রতি ভাড়া ছিল ৮০০ টাকা । দ্রুত হোটেলে ঢুকে যে যার মতো ফ্রেশ হয়েই বের হয়ে পড়লাম রাতের খাবারটা সেরে ফেলার জন্য, জানামতে বেশি রাত অবধি এখানকার খাবারের হোটেলগুলো খোলা থাকে না। থাকার হোটেলটির পাশেই একটা খাবার হোটেল ছিল ‘ভাতের হোটেল’ নামে। খুব কম দামেই আলু ভর্তা, শুটকি ভর্তা, বেগুন ভর্তা আর মুরগী দিয়ে নিমিষেই বেশ চমৎকার পেট ভরিয়ে ফেললাম আমরা। তারপর একটু চা পর্ব সেরে নেয়ার জন্য হোটেলের পাশেই একটা চায়ের দোকানে গিয়ে বসলাম সবাই মিলে। সিদ্ধান্ত হলো কাপ্তাই লেক ঘেঁষে একটু হেঁটে আসবো চাঁদের আলোয়। এক ফাঁকে আবার আমাদের ‘গাইড’ মাঝি ভাইয়ের সাথেও যোগাযোগ করে দেখা করে নিলাম, ঘাঁটে গিয়ে একপলক দেখেও নিলাম আমাদের প্রধান যাত্রাসঙ্গী ইঞ্জিনচালিত নৌকাটিকে। কেউ কেউ হাঁটা দিলো এদিক-সেদিক; হাঁটতে হাঁটতে গল্প জমছিলো, হচ্ছিলো ঠাট্টা। লেকঘেঁষে একটা কেটে রাখা গাছের গুঁড়ির উপর সবাই বসে কিছুটা সময় পার করলাম। লেকের তাজা ঠান্ডা বাতাস এসে আমাদের জুড়িয়ে দিচ্ছিলো মন ও প্রাণ।

হোটেলে ফিরে এসে সবাই একত্রে আড্ডা দেয়া শুরু করলাম একরুমে বসে। সকলে সকলের পূর্ব ভ্রমণ অভিজ্ঞতা নিয়ে আলোচনা করছিলো। তার মাঝে মাঝে প্রান্ত ধরছিলো গান, আর আমরা গলা মেলাচ্ছিলাম সুর-লয়ের হিসেব না রেখেই। রাত একটায় আড্ডা শেষ করে যখন ঘুমুতে যাবার প্রস্তুতি শুরু হবে, ঠিক তখনই সজলরা এসে পৌঁছালো। হিসেবমতে এতোটা সময় লাগার কথা ছিলো না তাদের, দুই ঘন্টার পথ পাঁচ ঘন্টা হওয়ার কাহিনী শুনতে আরেকপ্রস্থ আড্ডা শুরু হলো। চুয়েট গেট থেকে রাঙ্গুনিয়ায় নিজ বাসা হয়ে আবার রাউজান; তারপর রাঙামাটির শেষ বাস মিস করে এক ঘন্টা অপেক্ষা করে, সিএনজি যোগে ফিরতি পথে রাঙ্গুনিয়ার রানীরহাট। ভাগ্যক্রমে রানীরহাটে রাঙামাটিমুখী একটা সিএনজি পেয়ে যায়, রাত তখন বাজে সাড়ে বারোটা। তারপর আমাদের নাগালে আসতে রাত একটারও বেশি। তাকিয়ে দেখলাম: ক্লান্তি তো নেই-ই; বরং জ্বলজ্বল করছে বন্ধুর চেহারা। যা বুঝলাম, রাঙ্গুনিয়া থেকে রাঙামাটির সঠিক রুট পরিকল্পনা না জানার কারণেই বাড়তি এ পথের ঝক্কি; তবে অসাধ্য সাধন করে সফল হওয়ায় মিলিয়ে গিয়েছে ঐ দূর পথ পাড়ি দেয়ার ক্লান্তির ছাপ।
আড্ডা শেষে ঘুমোতে যাবো। বিপত্তি বাঁধ সাধলো তখনই! রুম খুলতে গিয়ে মাথায় হাত! রুমের চাবি বেখেয়ালে একজন ভেতরে রেখে তালা মেরে আড্ডা দিতে চলে গিয়েছিলো। দ্রুত হোটেল কর্তৃপক্ষকে জানালাম, এতো রাতে কোথা থেকে তারাও বা চাবি ঠিক করার জন্য পেশাদার মানুষ পাবে! বুঝলাম ভালোই বিপদে পড়েছি! শেষ পর্যন্ত তালা ভাঙা ছাড়া কোনো উপায় দেখলো না হোটেল কর্তৃপক্ষ।

ঘুমাতে যেতে দু’ টো পেরিয়ে ঘড়ির কাঁটা আড়াইটায়; আগামীকাল ভোরে উঠতে হবে। পরিকল্পনা মাফিক, আগামীকাল তিনটি ঝর্ণা দেখতে যাবো আমরা; ন-কাটা, মুপ্পোছড়া ও গাছগাটা ঝর্ণা। খুব নিখুঁতভাবে সময়কে ব্যবহার করতে না পারলে ঝর্ণা সব দেখা হয়তো সম্ভব হবে না। ভোর ছয়টার মধ্যেই খাবার হোটেল থেকে নাস্তা সংগ্রহ করে নৌকায় উঠে পড়তে হবে সবাইকে।
বিলাইছড়িঃ মুপ্পোছড়া, ন-কাটা ও গাছকাটা ঝর্ণার দেশে (দ্বিতীয় পর্ব)