বগালেক কিংবা বগাকাইন হ্রদের উৎপত্তির কারণ হিসেবে ‘মৃত আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ অথবা উল্কাপিন্ডের পতন’ এ দুটো তথ্যকে প্রাধান্য দেয়া হয়। তবে পৌরাণিক ‘ড্রাগন দেবতা’ এবং ‘নাগরাজ সাপ’ এর গল্পও প্রচলিত আছে। বম ভাষায় ড্রাগনকে “বগা” বলা হয়। বগালেকের অবস্থান কেওক্রাডং পৌঁছুনোর আগেই।
‘কেওক্রাডং’ মারমা শব্দ, যার অর্থ ‘উঁচু পাথরের পাহাড়’। উচ্চতাইয় এটি ৩২৩৫ ফুট এবং পঞ্চম উচ্চতম পর্বতচূড়া।
কখন যাবেনঃ
শীতে এবং বর্ষায় পাহাড়ের সৌন্দর্য ভিন্ন রকম। শীতে বগালেক-কেওক্রাডং ভ্রমণে মিলবে মেঘের আলিংগন এবং বর্ষায় উপভোগ করা যায় গাঢ় সবুজের হাতছানি।
বগালেক/চিংড়ি ঝর্ণা/কেওক্রাডং ভ্রমণ পরিকল্পনাঃ
কয়েক উপায়ে বান্দরবান শহর থেকে কেওক্রাডং পৌঁছুতে পারেন।
- ঢাকা, চট্টগ্রাম কিংবা দেশের যে কোন প্রান্ত থেকে প্রথমেই চলে আসতে হবে বান্দরবান শহরে। শহর থেকে রুমা বাসস্ট্যান্ড থেকে রুমাগামী বাসে রুমা নেমে চাঁদের গাড়িতে করে বগালেকে রাত্রীযাপন শেষে পরের দিন হেঁটে ট্রেকিং করে কেওক্রাডং জয়।
- বান্দরবান শহর থেকেই চাঁদের গাড়িতে রুমা হয়ে বগালেকে খানিকটা সময় কাটিয়ে সেদিন-ই কেওক্রাডং ভ্রমণ।
- বান্দরবান শহর থেকে রুমায় বাসে পৌঁছে চাঁদের গাড়িতে করে বগালেক হয়ে কেওক্রাডং।
- গাইডের সাথে পরামর্শ করে অনুমতি সাপেক্ষে বান্দরবান শহর থেকে রুমায় নৌকায় পৌঁছে চাঁদের গাড়িতে করে বগালেকে রাত্রীযাপন কিংবা সেদিনই কেওক্রাডং এর উদ্দেশ্যে যাত্রা।
যাতায়াতের সুযোগ-সুবিধা এবং অনুমতির বিষয় বিবেচনা করে বাসে/চাঁদের গাড়িতে করে রুমা যাওয়া এবং রুমা থেকে বান্দরবানে বাস/চাঁদের গাড়িতে ফেরা ভালো সিদ্ধান্ত। বাজেট ট্রাভেলার না হলে চাঁদের গাড়িতে করেই চলে যেতে পারেন বান্দরবান শহর থেকে রুমা হয়ে বগালেক এবং পরের দিন হেঁটে কেওক্রাডং। তবে সবথেকে উপভোগ্য হলো ফেরার পথে নৌকায় রুমা থেকে বান্দরবান পৌঁছানো (অনুমতি পাওয়া সাপেক্ষে)
জেনে রাখা প্রয়োজনঃ
- শ্যামলী, ইউনিক, ঈগল, হানিফ, ডলফিন, এস.আলম, সৌদিয়া সহ বেশ কয়েকটি বাস সার্ভিস রয়েছে ঢাকা থেকে বান্দরবান শহরে। সময় লাগবেঃ ৮-১০ ঘন্টা (ভাড়াঃ নন এসি
৬২০-৬৫০ টাকা, এসি- ৯৫০-১৪০০ টাকা) - চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট বাসটার্মিনাল থেকে পূরবী ও পূর্বাণী নামে দু’ টি বাস যায় বান্দরবানে। সময় লাগবেঃ ৩ ঘন্টা। (ভাড়াঃ ১১০ টাকা)
- বান্দরবান শহর থেকে রুমা বাসস্ট্যান্ডে যেতে হবে ব্যাটারি চালিত টমটমে। সময় লাগবেঃ ১৫ মিনিট (ভাড়াঃ ১৫ টাকা)
- বান্দরবান থেকে রুমা বাজার সারাদিন ২-৩ ঘন্টা পরপর বাস যায়। সময় লাগবেঃ ৪ ঘন্টা (ভাড়াঃ ১২০ টাকা)। চাঁদের গাড়িতেও বান্দরবান থেকে রুমা যাওয়া যায়। সময় লাগবেঃ ৩ ঘন্টা (ভাড়াঃ ৩৫০০টাকা)
- রুমা বাজারে পৌঁছে গাইড নিতে হবে।
- গাইডসহ রুমা বাজারের আর্মি চেক-পোস্টে চেক-ইন করে আবারো নাম এন্ট্রি করে পরবর্তী গন্তব্য বগালেক। রুমা বাজার থেকে চাঁদের গাড়িতে (রিজার্ভ) বগালেক যেতে পারেন। চাঁদের গাড়িতে সময় লাগবেঃ ১.৫ ঘন্টা। ভাড়াঃ ২২০০ টাকা।
- বান্দরবান থেকে চাঁদের গাড়িতে বগালেকে যেতে রিজার্ভ ভাড়া ৬০০০ টাকা। তবে যাওয়া এবং আসা গাইড দাদার সাথে আলাপ করে ১০,০০০ টাকার সেরে ফেলতে পারেন।
- বান্দরবান থেকে চাঁদের গাড়িতে কেওক্রাডং যাওয়া এবং আসার রিজার্ভ ভাড়া ১৪০০০-১৫০০০ টাকা। ১ রাত ২ দিনের জন্যে।
- রুমাবাজার থেকে বগালেক এবং বগালেক থেকে রুমাবাজার পর্যন্ত চাঁদের গাড়িতে ভাড়া ৪৪০০ টাকা।
- ১ জন গাইড ১৫ জন টুরিস্ট নিতে পারেন।
- বগালেক এবং কেওক্রাডং এ থাকার কটেজ ঠিক করে দেবেন গাইড দাদা।
- বগালেক থেকে কেওক্রাডং হেঁটে যেতে সময় প্রয়োজন ২-৫ ঘন্টা।
- বগালেক থেকে কেওক্রাডং যেতে পথে পাবেন চিংড়ি ঝর্ণা।
- গাইডের থাকা এবং খাওয়া খরচ বহন করতে হবে ট্যুরিস্টদের।
- চাঁদের গাড়িতে বসতে পারবেন ১২ জন।
- একজন গাইড সাথে নিতে পারবেন সর্বোচ্চ ১৫ জনকে।
যোগাযোগঃ
- হানিফ (ফকিরাপুল): 02-7191512, ইউনিক (ফকিরাপুল): ০১৯৬৩-৬২২২২৭
- ইউনিক (বান্দরবান): ০১৫৫৩২০৮০১০, শ্যামলী (বান্দরবান): ০৩৬১-৬৩৬১১
- পূরবী (চট্টগ্রাম): ০৩৬১-৬২৪৩৯, পূর্বাণী (চট্টগ্রাম): 01820-412800
- পূরবী (বান্দরবান): 0361-62439, পূর্বাণী (বান্দরবান): 0361-62508
- রুমাগামী বাসঃ ০১৮৫৫৬৩৩৮৬২ (লাইন্স ম্যান)
চাঁদের গাড়িঃ (নাসির ভাই) 01830316879
গাইডঃ
(মিঠুন দা’) 01790-225677, 01820-432778, 01890-170022
(উজ্জ্বল দা’) 01887-669841
গাইড বাবদ খরচঃ ২৬০০ টাকা (২ রাত, ৩ দিন)
গাইডের থাকা এবং খাবার খরচ ট্যুরিস্টের বহন করতে হবে। বিভিন্ন চেক-পয়েন্টে যে কাগজ জমা দিতে হবে তা বাবদ খরচ হবে ১০০ টাকা রুমায় (১০ জনের জন্যে )
বিভিন্ন বাসের টিকেটের জন্যে যোগাযোগঃ
ঢাকা কাউন্টারঃ shorturl.at/gyHU9
বান্দরবান কাউন্টারঃ shorturl.at/dmA36
থাকার কটেজ:
বান্দরবানঃ
হোটেল হিল ভিউ:০৩৬১-৬৩০৪৫
হোটেল রিভার ভিউঃ ০৩৬১-৬২৭০৭, ০১৭৩১-১১২৭৫৭
বগালেকঃ
সিয়াম দিদির কটেজে: ০১৫৩২-৭১৬৯৮৭
কেওক্রাডংঃ
রোবেলঃ ০১৮৮০৩২০৯৩১
কেওক্রাডং কিংবা বগালেকে থাকার কটেজ ঠিক করে দেন গাইড দাদা নিজেই।
খরচঃ
বগালেকের পাশের কটেজগুলোতে থাকা বাবদ খরচ হবে ১৫০ টাকা এবং কেওক্রাডং চূড়ায় কটেজে থাকা বাবদ খরচ হবে ৩০০ টাকা। দার্জিলিং পাড়াতেও থাকতে পারেন।
খাবার হোটেলঃ
বগালেক/কেওক্রাডং এর চূড়ায় খাবার খরচঃ
বগালেকের থাকার কটেজ গুলোর নিচেই পাবেন ঘরোয়া পরিবেশে আদিবাসী খাবার হোটেলগুলো। কেওক্রাডং এ চূড়ায় ওঠার পাশেই পাবেন আদিবাসী খাবার হোটেলটি। এখানে খাবার হোটেল ১ টি। ভাত, ঘন ডাল, সবজি, ডিম, ভর্তা দিয়ে খেতে পারবেন ১৫০ টাকা এবং মুরগী দিয়ে খেতে পারবেন ১৮০ টাকা দিয়ে।
এছাড়া গাইড দাদাকে আগেই জানিয়ে রাখলে, রুমা বাজার থেকে মশলা, মুরগী, লাকরি কিনে এনে বার-বি-কিউ করতে পারেন। প্রতিজনে পরাটাসহ খরচ পড়বে জনপ্রতি ১২০-১৫০ টাকা ।
কেওক্রাডং ভ্রমণে দর্শনীয় স্থানসমূহঃ
- কেওক্রাডং পাহাড়
- বগালেক
- চিংড়ি ঝর্ণা
- দার্জিলিং পাড়া
‘কেওক্রাডং’ ভ্রমণ সম্পর্কিত পরামর্শঃ
- বগালেক থেকে কেওক্রাডং ট্রেকিং ভ্রমণে মানসিক স্থিরতার উপর নির্ভর করতে হবে।
- কেওক্রাডং ভ্রমণে জার্নি হবে প্রচুর। কষ্ট সহিষ্ণু মানসিকতা থাকতে হবে।
- শীতের রাতে পাহাড়ের তাপমাত্রা নেমে যায় বেশ নিচে। তাই গরম কাপড় নেয়া বাঞ্চনীয়।
- শুকনো খাবার যেমন বিস্কুট, কেক ও পানি ও কলা নেবেন পর্যাপ্ত। স্যালাইন ও গ্লুকোজ রাখবেন সাথে।
- মুঠোফোন চার্জের এর জন্য পাওয়ার ব্যাংক সাথে নেবেন অবশ্যই।
- প্রয়োজনীয় ঔষধ বান্দরবান শহর থেকেই নিয়ে নেবেন। ওয়ান টাইম ব্যান্ডেজ, গ্যাসের ট্যাবলেট, প্যারসিটামল, বমির ট্যাবলেট, পেট খারাপের ওষুধ সাথে রাখতে পারেন।
- ব্যাগ ওজনে হাল্কা হলে হাঁটতে সুবিধে হবে।
- রুমা বাজারে ট্রেকিং স্যান্ডেল পাওয়া যায়।
- একটা টর্চলাইট নেবেন সাথে।
- বর্ষায় গেলে ছাতা/রেইনকোট সাথে রাখবেন।
- সানগ্লাস এবং ধুলোবালি থেকে বাঁচতে মাস্ক সাথে রাখতে পারেন।
- সাথে কিছু পলিথিন ব্যাগ রাখলে ভেজা কাপড় নিয়ে আসতে সুবিধা হবে।
- মনে রাখবেন কেওক্রাডং এ পায়ে হেঁটে যেতে বগালেক হলো আপনার বেস ক্যাম্প। সুতরাং কেওক্রাডং এ প্রয়োজনীয় জিনিস আলাদা ব্যাগে নিয়ে হেঁটে চলে যান কেওক্রাডং এ। বাকি জিনিসপত্র ভিন্ন ব্যাগে রেখে বগালেকেই রেখে যাবেন কটেজে। গাইড দাদা এ ব্যবস্থা করেন দেবেন।
- হাঁটার সময় এংলেট এবং নিক্যাপ পড়ে নিতে পারেন।
- বাশেঁর লাঠি সাথে নিতে পারেন।
- ডাবের পানি পান করতে পারেন ট্রেকিং এ।
- হাঁটার সময় কিসমিস, বাদাম বার, খেজুর খেতে পারেন।
- সিদ্ধ ডিম না খাওয়াই উত্তম। অনেক সময় ২/৩দিন আগের সিদ্ধ করা ডিম দিতে পারে।
- মুখে চকলেট রাখতে পারেন। এটা গলা শুকিয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করবে।
- কেওক্রাডং এ গোসল করতে ৫০ টাকা গুনতে হবে।
- মিনি সাবান, শ্যাম্পু ও পেস্ট সাথে রাখবেন।
- বগালেক ও কেওক্রাডং এর অধিকাংশ কটেজেই এক রুমে ছয়-সাত জন করে থাকতে হয়।
- পাহাড়িরা খুবই পরিচ্ছন্ন। সেখানে গিয়ে আমাদের উচিত নোংরা না করা।
বগালেক/‘কেওক্রাডং’ ভ্রমণ সম্পর্কিত সতর্কতাঃ
- ন্যাশনাল আইডি/ক্যাম্পাস আইডি কার্ডের ৩ কপি ফটোকপি সাথে রাখবেন।
- বগালেক কিংবা কেওক্রাডং এ নেই বিদ্যুৎ সংযোগ। সুতরাং, পাওয়ার ব্যাংক সাথে রাখবেন।
- কেবলমাত্র টেলিটক ও রবি সিমের নেটওয়ার্ক পাবেন।
- বিকেল ৩ টার পর রুমা বাজার থেকে বান্দরবানগামী বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বান্দরবান থেকে পুরবী ও পূর্বাণীর শেষ বাস চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে সন্ধ্যা ৬ঃ৩০ মিনিটে।
- কেওক্রাডং এ সন্ধ্যা ৬টার পর হেলিপ্যাড থেকে নেমে যেতে হবে।
- কেওক্রাডং এ রাত ১০টার পর বাইরে থাকতে পারবেন না।
- বর্ষায় গ্রিপসহ স্যান্ডেল সাথে রাখবেন অবশ্যই।
- পাহাড় থেকে নামার সময় প্রত্যেকে অন্যদের থেকে যথেষ্ট দূরত্ব বজায় রাখবেন।
বগালেক/‘কেওক্রাডং’ ভ্রমণ সম্পর্কিত সচেতনতাঃ
- পাহাড়ে ম্যালেরিয়ার মশার কামড় থেকে বাঁচতে অডোমোস ক্রিম সাথে রাখবেন।
- রুমাগামী কিংবা বান্দরবানগামী বাস সার্ভিস সঠিক সময়ে ছেড়ে যায়। তাই নির্ধারিত সময়ের আগেই বাসস্ট্যান্ডে উপস্থিত থাকবেন।
- নিজস্ব সকল প্লাস্টিক বর্জ্য সাথে করে নিয়ে আসবেন।
বগালেক/‘কেওক্রাডং’ ভ্রমণ সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনাঃ
- আদিবাসী মানুষগুলো সরল প্রকৃতির। স্থানীয়দের সাথে ভালো ব্যবহার করবেন।
- বগালেকে পানিতে নেমে গোসল না করাই ভালো। আর্মির নজরদারিতে থাকবেন।
কেওক্রাডং ভ্রমণে নাম এন্ট্রি করতে হবে ৬ বার।
- বান্দরবান থেকে রুমা বাজারের পথে আর্মি চেক-পোস্টে নাম এন্ট্রি করতে হবে। জাতীয় পরিচয়পত্র আবশ্যিক।
- গাইডসহ রুমা বাজারের আর্মি চেক-পোস্টে চেক-ইন করে আবারো নাম এন্ট্রি করতে হবে। জাতীয় পরিচয়পত্র আবশ্যিক।
- রুমা বাজার থেকে বগালেকের পথে যেতে রুমা বাজার পুলিশ চেক পোস্টে নাম এন্ট্রি করতে হবে।
- বগালেকে পৌঁছে আর্মি চেক-পোস্টে নাম এন্ট্রি করতে হবে।
- বগালেক থেকে কেওক্রাডং যেতে বগালেক আর্মি চেক-পোস্টে নাম এন্ট্রি করতে হবে।
- বগালেক থেকে কেওক্রাডং পৌঁছে কেওক্রাডং আর্মি চেক পোস্টে নাম এন্ট্রি করতে হবে।
ফিরতি পথে এ সকল স্থানে একইভাবে সাক্ষর শেষে ফিরতে হবে। প্রথমটি ব্যতীত সকল এন্টিকরণেই গাইড দাদা সাহায্য করবেন। এ সকল অনুমতিতে কোন খরচ নেই।
বিশেষ আকর্ষণঃ
- আদিবাসী হোটেলগুলোতে গয়ালের মাংশ রান্নার আইটেম এবং আদিবাসীদের রান্না পিঠা খুঁজে দেখতে পারেন।
- রুমা বাজারে আদীবাসীদের নিজস্ব ভাষায় গাওয়া গানের সিডি খুঁজে দেখতে পারেন।